13 June 2016

যে ধরণের সিভি আপনাকে চাকুরি পেতে সাহায্য করবে

চাকরির জন্য প্রথমেই দরকার সুন্দর ও গোছানো জীবন বৃত্তান্ত। এই জীবন বৃত্তান্ত যে কোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে আপনার। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, সিভি জমা দেওয়ার পর কোনো সাড়া নেই। এর কারণ, সঠিকভাবে সিভি তৈরি না করার বাতিলের খাতায় নাম লিখিয়েছে আপনার আবেদনপত্র। অনলাইনে একটু ঢুঁ মারলে পেয়ে যাবেন প্রফেশনাল সিভি তৈরির রাজ্যের নিয়ম। তবে যারা মাত্র পাস করে বেরিয়েছেন বা ১-২ বছরের বেশি কাজের অভিজ্ঞতা নেই, তাদের সিভির ধরন আর প্রফেশনালদের সিভির ধরন কিছুটা ভিন্ন। সিভি বা কারিকুলাম ভিটা ব্যক্তির পরিচয়, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রাপ্তি, ইচ্ছা ইত্যাদির রিপোর্ট। সিভিতে পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আরও কিছু ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নিজের পছন্দ-অপছন্দ, আগ্রহ, শখ, নেতৃত্বদানের ক্ষমতাও যোগ করতে পারেন। এটি চাকরিদাতার কাছে নিজেকে তুলে ধরার আরেকটি উপযুক্ত কৌশল। নানা মোড়কে সিভি ক্রোনোলজিক্যাল সিভি : কেউ যদি একই সেক্টরে থেকে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাল্টাতে চান, আপনার জন্য ক্রোনোলজিক্যাল সিভি সবচেয়ে ভালো ফরম্যাট। এ ফরম্যাটে ক্যারিয়ার হিস্টোরি সাজাতে হয় কালানুসারে। সাম্প্রতিক চাকরির অবস্থানকে প্রথমে দিয়ে পর পর অন্য চাকরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। ফাংশনাল সিভি : ক্যারিয়ার ট্র্যাক পরিবর্তন করতে চাইলে ফাংশনাল সিভি ভালো। এ সিভিতে অর্জন ও কাজকে হাইলাইট করা হয়। এমনকি দক্ষতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপাদান, বিশেষজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে দিতে হয়। এ ধরনের সিভিতে কাজের ধরন ও প্রতিষ্ঠানের নাম খুব একটা গুরুত্ব পায় না। এ ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতাকে সবচেয়ে বেশি লাইনআপ করা হয়। টার্গেটেড সিভি : টার্গেটেড সিভি নির্দিষ্ট কাজের জন্য বিশেষভাবে তুলে ধরতে প্রার্থী আবেদন করেন। কোনো ব্যক্তির ক্যারিয়ার জীবনের অর্জন ও সক্ষমতাকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয় এ সিভি। যদি নির্দিষ্ট কোনো চাকরি বা কাজের জন্য সিভি প্রয়োজন হয়, তার জন্য খুব ভালো ফরম্যাট এই সিভি। অল্টারনেটিভ সিভি : অল্টারনেটিভ সিভি ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য। অ্যাড ডিজাইন, মিডিয়া অথবা পাবলিক রিলেশনের মতো ব্যক্তিনির্ভর কাজে এ সিভি উপযুক্ত। সাজানোর কলাকৌশল পেশাদারিত্বে আপনি যখন প্রবেশ করবেন, তখন সিভিও হতে হবে পেশাদার। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন_ – সিভি ইংরেজিতে তৈরি করুন। তবে প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুসারে তা বাংলায়ও হতে পারে। ইংরেজিতে তৈরি করলে লেখার ফ্রন্ট ‘টাইমস্ নিউ রোমান’, বাংলায় হলে ‘সুতন্বি এমজে’ রাখুন। ফ্রন্ট সাইজ ১২ আর লাইন স্পেস হোক ১.৫। সিভির প্রধান শাখাগুলো বোল্ড করে দিন। – সিভির পয়েন্টগুলো এমনভাবে সাজান, যেন নিয়োগকর্তা পরের অংশটি পড়তে আকৃষ্ট হন। – সিভিকে শুধু শুধু অতিরঞ্জিত করবেন না। বরং সত্যি কথাটি পরিষ্কার করে লিখুন। নিজের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। এতে নিয়োগকর্তার বিশ্বাস অর্জন করা আপনার পক্ষে সুবিধাজনক হবে। – সিভির শুরুতেই সদ্য তোলা ছবি এবং পত্র যোগাযোগের ঠিকানা জুড়ে দিন। সিভির ভাষা রাখুন সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত। কড়া নজর রাখুন, যেন কোনো তথ্যের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সিভি দুই পৃষ্ঠার বেশি না বাড়ানোই ভালো। তবে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাভেদে ব্যতিক্রম ঘটলে ক্ষতি নেই। – এমনভাবে সিভি বানান, যেন প্রধান বিষয়গুলো সহজেই নজরে পড়ে। এ জন্য তিনটি জিনিস বজায় রাখা দরকারি। যেমন- ক. বাক্য যেন সোজাসাপ্টা হয়, খ. ছোট বাক্য লিখুন, দরকারমতো বুলেট ব্যবহার করুন এবং গ. হেডিং আর তারিখ যেন মূল টেক্সটের ফ্রন্ট সাইজের থেকে আলাদা হয়; যাতে সেগুলোকে মূল টেক্সটের অংশ বলে মনে না হয়। দ্ব কোনো ভাষা শিক্ষা, কম্পিউটার কোর্স ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকলে তাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। কেননা, তা অভিজ্ঞতা ও বহুবিধ জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করে। – শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে ততটুকু বলুন, যেটুকু দরকারি। বেশি বর্ণনায় যাওয়া মোটেই কাজের কথা নয়। বরং নির্দিষ্ট কাজের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশ নিয়ে থাকলে তা উল্লেখ করুন স্পষ্টভাবে। – কাজের সুবাদে কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতি পেয়ে থাকলে তা ভালো করে হাইলাইট করুন। মনে রাখবেন, পেশার জগতে নিজের দক্ষতাকে বিক্রি করতে পারাটাই আসল লক্ষ্য। – মনে রাখবেন, নিয়োগকর্তা চাকরিতে একজন মানুষকে নিতে চান, যন্ত্রমানবকে নয়। তাই শখের জন্য একটি সাবহেড আলাদা করে তৈরি করতেই পারেন। কে বলতে পারে, ওই শেষ পয়েন্টটিই হয়তো বাকি সিভির থেকে আপনার সিভিটিকে আলাদা করে চোখে পড়িয়ে দেবে। শিক্ষাজীবনে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি থাকলে তা লিখতে পারেন। কারণ তার মাধ্যমে আপনার টিমওয়ার্ক এবং সমাজসেবার ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে। – সিভিতে রেফারেন্স দিতে হয়। এমন দু’জন ব্যক্তির রেফারেন্স দেবেন যারা নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও আপনার পরিচিত। তাদের পূর্ণ ঠিকানা দেবেন এবং আপনি যে সিভিতে তাদের রেফারেন্স দিয়েছেন, তা তাদের জানিয়ে দিন, যেন অবাঞ্ছিত সমস্যা এড়ানো যায়। – সিভি লেখার শেষে প্রত্যায়িত করতে ভুলবেন না। এটি হবে স্ব-প্রত্যায়িত। অর্থাৎ উপরোক্ত সব তথ্য সঠিক ঘোষণা করে প্রত্যয়ন করবেন। এতে আপনার সত্যবাদী চেতনা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের আগ্রহ প্রকাশ পাবে।

No comments:

Post a Comment